অসুস্থতার সময় শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো
যখন অসুস্থ বোধ করবেন তখন কীভাবে নিরাপদে শিশুকে লালন-পালন করবেন।
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
আপনি আপনার সন্তানকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন বা খাওয়ানোর পরিকল্পনা করছেন, এমন সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
কিন্তু ভালো খবর হচ্ছে, এমন সময়েও শিশুকে মায়ের বুকের দুধ দেওয়ার পক্ষে/সমর্থনে অনেক প্রমাণ রয়েছে। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো, মায়ের শরীরের সংস্পর্শ এবং দ্রুত ও ছয়মাস বয়স অবদি কেবল মায়ের দুধ খাওয়ালে আপনার বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, সুষ্ঠু বিকাশে সহায়ক হবে যার প্রভাব সে সারা জীবন ভোগ করতে পারবে।
নতুন মা হয়েছেন বা মা হওয়ার অপেক্ষায় আছেন, এমন নারীদের জন্য অসুস্থতার সময় কীভাবে সন্তানকে সবচেয়ে নিরাপদ উপায়ে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো যায়, সে বিষয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্নের জবাব এখানে তুলে ধরা হলো।
আমি অসুস্থতা বোধ করলে কি সন্তানকে নিরাপদে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে পারব?
ঠাণ্ডা বা জ্বরের মতো সাধারণ অসুস্থতার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো নিরাপদ যদি আপনি হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলেন। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে গেলে তা আপনার স্তনে দুধ আসায় সহায়ক হবে। পাশাপাশি এটা আপনি যে অসুস্থতায় ভুগছেন, তা থেকে সংক্রমণের সুরক্ষাও আপনার সন্তানকে দেবে।
শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আমি কি ওষুধ সেবন করতে পারব?
অসুস্থতার সময় আপনার যদি কোনো ওষুধ সেবন করা লাগে তাহলে আপনার স্বাস্থ্য সেবাদানকারী বা ডাক্তারকে জানান যে আপনি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ দিচ্ছেন এবং শিশু যেন নিরাপদ থাকে সেজন্য কী করা যায়।
অসুস্থতা যদি এমন পর্যায়ে যায় যে, শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে পারছি না তখন কী করব?
আপনি যদি এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন যে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন না, তখন আপনার সন্তান যেন নিরাপদে মায়ের দুধ পায় সেজন্য অন্যান্য উপায় দেুখন। নিজের মায়ের দুধ সংগ্রহ করে (এক্সপ্রেসিং) তা পরিষ্কার কাপ বা চামচে করে আপনার সন্তানকে দিন। আর কী কী উপায় অবলম্বন করা যায়, সে বিষয়ে আপনার ব্রেস্টফিডিং পরামর্শক বা স্বাস্থ্য সেবাদানকারী/ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
মায়ের বুকের দুধ এক্সপ্রেসিং (চেপে বা পাম্পের সাহায্যে টেনে দুধ বের করা) বুকে দুধ আসাটা ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে আপনি যখন সুস্থ হবেন তখন আপনার সন্তানকে আবার ভালোভাবে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।
আমার সন্তান অসুস্থ হলে কি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ঠিক হবে?
সন্তান অসুস্থ হলেও তাকে মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। মায়ের দুধ আপনার সন্তানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। মায়ের দুধের মধ্য দিয়ে আপনার শরীরের অ্যান্টিবডিগুলোও তার শরীরে যাবে। এসব অ্যান্টিবডি জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাকে সহায়তা করবে।
আমি অসুস্থ হলে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কী কী পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?
আপনি যদি অসুস্থ হন বা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে মনে হয় তাহলে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর উপায় কী হতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শের জন্য আপনার স্বাস্থ্য সেবাদানকারী/ ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
আপনার শিশুর সুরক্ষার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাধারণ নিয়মগুলো অনুসরণ করুন। সন্তানকে ধরার আগে ও পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। এক্ষেত্রে আপনি কোনো অ্যালকোহলমিশ্রিত হ্যান্ড রাবও (হাত মোছার জন্য একধরণের মিশ্রণ) ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যেসব জিনিসপত্র ধরছেন বা যেসব জায়গা স্পর্শ করছেন, সেগুলো জীবাণুমুক্ত রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবার ব্যবহারের পর মায়ের বুকের দুধ টানার পাম্প, দুধ রাখার পাত্র ও শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সরঞ্জামগুলো ভালোভাবে ধুয়ে রাখুন।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে বা এই রোগ হয়েছে বলে সন্দেহ হলে কি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ঠিক হবে?
হ্যাঁ, যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে আপনার শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। মায়ের দুধ বা তা খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে এক্ষেত্রে আপনার সন্তানকে ধরার আগে ও পরে সতর্কতা যেমন মাস্ক পরা, সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া বা অ্যালকোহলমিশ্রিত হ্যান্ড রাব দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নেওয়া এবং নিয়মিত আপনার স্পর্শ করা জিনিসপত্র ও জায়গাগুলো জীবাণুক্ত করে নেওয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বুকের ওপর যদি কফ পড়ে তাহলে বুক ধুয়ে নিতে হবে। তাছাড়া প্রতিবার শিশুকে দুধ দেওয়ার আগে বুক ধুয়ে নেওয়ার দরকার নেই।
আমি যদি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াই বা বুকের দুধ এক্সপ্রেস করে তাকে দিই তাহলে কি আমার কোভিড-১৯ টিকা নেওয়া উচিত হবে?
হ্যাঁ, প্রতিটি সুস্থ মা যিনি সরাসরি শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াচ্ছেন বা এক্সপ্রেস করে দিচ্ছেন, তাদের প্রত্যেককেই কোভিড-১৯ টিকা দিতে হবে।