আপনার দ্বিতীয় তিনমাসের নির্দেশিকা
আপনার গর্ভাবস্থার ১৩ সপ্তাহ থেকে ২৮ সপ্তাহের জন্য পরামর্শ
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
আপনার দ্বিতীয় তিনমাসকে স্বাগতম! অনেক মহিলা দেখতে পান যে তাদের প্রথম তিনমাসের তুলনায় তাদের কম লক্ষণ রয়েছে। আপনার গর্ভাবস্থার সময়ে, আপনার গর্ভাশয় উপরের দিকে এবং বাইরের দিকে বাড়ার সাথে সাথে আপনি একটি ছোট বেবি বাম্প দেখতে শুরু করতে পারেন।
আপনি কেমন বোধ করছেন
প্রত্যেক নারীই আলাদা। তবে সন্তান-সম্ভবা মায়েদের মধ্যে অনেকেই প্রথম তিনমাসের চেয়ে দ্বিতীয় তিনমাসের সময়টা ভাল অনুভব করেন। আশা করা যায় যে, এই সময়টাতে আপনি কম বমি-বমি ভাব এবং কম ক্লান্তি বোধ করবেন।
এ সময়টাতে আপনি পেট স্ফীত হয়ে যাওয়ার মতো আরও কিছু নতুন পরিবর্তনের সন্মুখিন হতে শুরু করবেন। এবং তৃতীয় তিনমাসে প্রবেশের সময় আপনার সন্তান নড়াচড়া করছে এবং আপনাকে লাথি মারছে - আপনার এমন অনুভূতি শুরু হওয়া উচিত!
সাধারণ লক্ষণসমূহ
যদিও দুটি গর্ভাবস্থা কখনই একরকম নয়, তবে দ্বিতীয় তিনমাসের সময় আপনি কিছু লক্ষণ অনুভব করতে পারেন। লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:
- হাত এবং আঙ্গুলের যন্ত্রণা - আপনার হাত অবশ হয়ে যাওয়া, অস্বস্তি হওয়া বা এমন অনুভব করা
- ত্বকের একটি রেখা আপনার নাভি থেকে যৌন কেশ পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়া
- আপনার মুখে গাঢ় ছোপ ছোপ দাগ পড়া
- পিঠের নিচে এবং শ্রোণীতে ব্যথা
- স্তনবৃত্ত কালো হয়ে যাওয়া
- আপনার স্তন, পেট, নিতম্ব এবং উরুতে প্রসারিত দাগ পড়ে যাওয়া।
নিজের যত্ন
দ্বিতীয় তিনমাসের সময় যদিও আপনার লক্ষণগুলো অনেকটা কমে আসা উচিত, তবে আপনি আপনার শরীরে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে শুরু করবেন। এই পরিবর্তনগুলোর সাথে আসতে পারে এমন কিছু ব্যথা এবং যন্ত্রণা যা সামলাতে আপনি প্রথমে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে যাচাই করে নিয়ে নিচের কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখুন।
মনে রাখবেন, অগ্রাধিকার এবং হাতের কাছে যে জিনিসগুলো সহজলভ্য আপনার সিদ্ধান্ত সবসময় তার ভিত্তিতেই নেয়া উচিত।
- পিঠের নিচের অংশ এবং শ্রোণীতে ব্যথার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসার অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে যা পাশাপাশি ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো হলো, ফিজিওথেরাপি, বেল্ট ব্যবহার এবং আকুপাংচার।
- হাত এবং আঙ্গুলের যন্ত্রণার মতো লক্ষণের ক্ষেত্রে বিশ্রাম, বরফ চাপা এবং আপনার হাত এবং কব্জি উপরে তোলা।
- প্রসারিত দাগ পড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যদি আপনি কোনও ক্রিম, জেল বা লোশন ব্যবহার করতে চান, তবে প্রথম দিকেই এটি করা শুরু করুন এবং যেখানে দাগ হয়েছে এমন স্থানে এসব পণ্য মালিশ করুন। একটানা কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন নির্বাচিত পণ্যটি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয় তিনমাস এমনকি পুরো গর্ভাবস্থার সময়টাতেই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নিয়মিত শারীরিক অনুশীলনের রুটিন বজায় রাখুন। তবে নিজেকে কখনোই ক্লান্ত করবেন না। একটি সাধারণ নিয়ম হিসাবে, কাজ করার সময় কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আপনার থাকা উচিত। গর্ভাবস্থায় শারীরিক অনুশীলন সম্পর্কে সবসময় আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন। পর্যাপ্ত শক্তি, আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ জাতীয় খাদ্য নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরণের খাবার খাওয়া উচিত।
আপনার সন্তানের বৃদ্ধি ঘটছে কীভাবে
দ্বিতীয় তিনমাসে আপনার সন্তানের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো এবং শরীর আরও পরিশীলিতভাবে বিকশিত হতে থাকে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সপ্তাহগুলোতে যা হয় সেগুলো নিম্নরূপ:
- হাড় শক্ত হতে শুরু হয়
- ত্বক ঘন হতে শুরু হয়
- পায়ের গোড়ালি গঠিত হয়
- স্নায়ুতন্ত্র বিকশিত হতে শুরু হয়
- শ্রবণশক্তি বিকশিত হতে শুরু হয়
- মস্তিষ্কের এমন অংশের বিকাশ ঘটতে শুরু করে যা শারীরিক নড়াচড়া কিংবা চালচলনকে প্রভাবিত করে
- চোখের পাতা খুলতে এবং বন্ধ করতে পারে
- লাথি জোরালো হতে পারে
- হজম ব্যবস্থা কাজ করতে শুরু করে
- ফুসফুস সম্পূর্ণরূপে গঠিত হয়
ভ্রূণের বৃদ্ধি বিভিন্ন কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে দ্বিতীয় তিনমাসের শুরুতে আপনার সন্তান প্রায় ১০ সেন্টিমিটার (৪ ইঞ্চি) লম্বা হয় এবং তার ওজন প্রায় ২৮ গ্রাম হয়। দ্বিতীয় তিনমাস শেষ হওয়ার পরে, আপনার বেড়ে ওঠা সন্তানটি প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার (১৪ ইঞ্চি) লম্বা হবে এবং তার ওজন ১ থেকে ২ কেজি (২ থেকে ৪ পাউন্ড) হবে। [ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক থেকে প্রাপ্ত তথ্য]। আপনার নিজ দেশের তথ্যের জন্য, অনুগ্রহ করে আপনার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিন।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে আমার কখন দেখা করা উচিত?
দ্বিতীয় তিনমাসের সময়, ২০ সপ্তাহের সময় একবার এবং ২৬ সপ্তাহের সময় আরেকবার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে আপনার সাক্ষাৎ করা উচিত। আপনার নিজ দেশের তথ্যের জন্য, অনুগ্রহ করে আপনার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিন।
যেসব বিষয় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে
যেহেতু প্রত্যেক নারীর গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা ভিন্ন, সেহেতু নিচের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলে আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে কথা বলতে হবে:
- মারাত্মক খিল ধরা বা পেটে ব্যথা
- ৩৮ (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে জ্বর
- যোনিপথে রক্ত বা তরল বের হওয়া
- হঠাৎ বা চরম ফোলাভাব
- দুর্গন্ধযুক্ত যোনি স্রাব
- প্রস্রাবে যন্ত্রণা
- মারাত্মক এবং অবিরাম মাথাব্যথা
- রক্ত বমি করা
- শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা
- হৃদপিণ্ডের ধড়ফড়ানি
- ঝাপসা দৃষ্টি