কোভিড-১৯: বহুল জানতে চাওয়া বিষয়সমূহ
কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত করার জন্য কিছু টিপস এবং নির্দেশ
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
ইউনিসেফের কোভিড-১৯ পোর্টালে ফিরে যান
কোভিড -১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে শিশু এবং তাদের পরিবারকে বিপর্যস্ত করেছে। কোভিড-১৯ বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রচারের জন্য ইউনিসেফ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করছে মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে এই সংক্রান্ত ভীতি দূর করার জন্য। এক্ষেত্রে তারা বিশ্বাসযোগ্য নির্দেশনা দিচ্ছে এবং পরিবারের সকলে জানতে চায় এমন প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।
কোভিড-১৯ কী?
কোভিড-১৯ শ্বাসযন্ত্রের একটি সংক্রামক রোগ যা সার্স-কোভ-২ নামে একটি নতুন আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। করোনা থেকে ‘কো’, ভাইরাস থেকে ‘ভি’, এবং ‘ডিজিজ’ বা ‘রোগ’ থেকে ‘ডি’ নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ কোভিড করা হয়।
কোভিড-১৯ এর লক্ষণসমূহ কী?
কোভিড-১৯ এর অনেক লক্ষণ ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা), ঠান্ডা জ্বরের মতোই। এ কারনেই কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করে নেয়া দরকার। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার দুই থেকে ১৪ দিন পরে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এতে খুব হাল্কা থেকে গুরুতর অসুস্থতা পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগে সংক্রমিত হয়েছে এমন অনেক লোকের ক্ষেত্রে আবার কোন লক্ষনীয় উপসর্গ দেখা যায়না।
এই রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো হল জ্বর, কাশি এবং ক্লান্তি। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা চাপ, মাংসপেশী বা শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, বিভ্রান্তি, গলা ব্যথা, রক্তজমাট বাঁধা বা নাক দিয়ে পানি পড়া, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব এবং বমি, পেটে ব্যথা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি উঠা। এসব লক্ষণ ছাড়াও শিশুদের খেতে অসুবিধা হতে পারে। যে কোনো বয়সের শিশুরা কোভিড -১৯ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যদিও শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণগুলো একই রকমের হয়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা এই রোগে সাধারণত কম গুরুতর অসুস্থ হয়।
যে সব লক্ষণ দেখা দিলে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় সেগুলো হলো, শ্বাস নিতে অসুবিধা/দ্রুত বা অগভীর শ্বাস (এছাড়াও কুঁকড়ে যাওয়া, শিশুদেরকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর অক্ষমতা), নীল ঠোঁট বা মুখ, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব করা, বিভ্রান্তি, ঘুম না ভাঙ্গা/আলাপচারিতায় অনীহা, কোনো কিছু পান করার অক্ষমতা বা তরল কিছু ধরে রাখতে না পারা এবং মারাত্মক পেট ব্যথা।
কোভিড -১৯ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?
সংক্রমিত ব্যক্তি যখন কাশি বা হাঁচি দেয় অথবা কথা বলে, গান করে বা শ্বাস নেয় তখন মুখ বা নাক থেকে নিঃসৃত ছোট ছোট কণার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই কণাগুলো আকারে বড় শ্বাসযন্ত্রের ফোঁটা থেকে শুরু করে অ্যারোসোলের ছোট ফোঁটার মতো পর্যন্ত হতে পারে এবং কোন ধরনের লক্ষণ ছাড়াও মানুষজন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে পারে।
এখন পর্যন্ত যে সব প্রমাণ পাওয়া গেছে সেগুলো থেকে বোঝা যায় যে, ভাইরাসটি মূলত এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে যারা একে অপরের সাথে সাধারণত এক মিটারের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করে। ভাইরাস বহনকারী কণাগুলো যখন শ্বাস নেয়া হয় বা সরাসরি চোখ, নাক বা মুখের সংস্পর্শে আসে তখনই একজন ব্যক্তি থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে।
বাতাস চলাচলে সমস্যা রয়েছে এবং/অথবা জনাকীর্ণ অভ্যন্তরীণ পরিবেশে যেখানে মানুষের বেশি সময় কাটানোর প্রবণতা থাকে সেখানে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। বায়ু চলাচলে সমস্যা রয়েছে এমন অভ্যন্তরীণ স্থান বাইরের স্থানের তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
ভাইরাস দ্বারা দূষিত সমতল স্পর্শ করার পর মানুষ তাদের মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করেও সংক্রমিত হতে পারে। কোভিড-১৯ কীভাবে ছড়ায় এবং কোন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন কি নিরাপদ এবং কার্যকর?
হ্যাঁ। এটি ঠিক যে, কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করা হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার স্বার্থে এসব ভ্যাকসিন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড পূরণ করছে কিনা তা প্রমাণ করতে সেগুলোকে অবশ্যই ক্লিনিকাল ট্রায়ালে কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় । যদি তারা এই মানদণ্ড পূরণ করে তবেই একটি ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে বৈধতা পায়।
>> কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সম্পর্কে আরও পড়ুন
কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে?
আমার সন্তান কি কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন নিতে পারবে?
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রাথমিক ট্র্যায়ালে শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে আলাদা এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বয়সের উপর নির্ভর করে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর হবে কিনা তা মূল্যায়নের জন্য ক্লিনিকাল পরীক্ষা চলছে। কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে সহায়তা করতে জাতীয় এবং স্থানীয় নির্দেশনা অনুসরণ করতে থাকুন।
>>পড়ুন: কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন সম্পর্কে আপনার যা জানা দরকার
কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বিভিন্ন রূপ রয়েছে বলে শুনেছি। এটার মানে কী?
সময়ের সাথে সাথে ভাইরাসের ধরণ পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের নতুন রূপগুলো বিশেষজ্ঞরা ক্রমাগতভাবে পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন। এগুলো পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে করোনাভাইরাস আরও কতটা সহজে ছড়ায়, আরো কতটা গুরুতর রোগ সৃষ্টি করে, অথবা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে - এগুলো ক্ষতিয়ে দেখা। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সহ ভাইরাসটির কিছু নতুন প্রজাতি অধিকতর সংক্রামক বলে ধারনা করা হচ্ছে।
কোভিড -১৯ এর সংক্রমণকে কমিয়ে আনার সর্বোত্তম উপায় হল মানুষের কাছে সহজলভ্য হওয়ার সাথে সাথে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং বাড়ির অভ্যন্তরীণ স্থানগুলোতে বায়ুচলাচল স্বাভাবিক রাখাসহ ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিদ্যমান পরামর্শ অনুসরণ করে যাওয়া।
কোভিড-১৯ এর এই নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে কোনও একটি কি শিশুদের জন্য বেশি বিপজ্জনক?
শিশুসহ অন্যদের উপর এই ভ্যারিয়েন্টগুলোর প্রভাবকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত যেসব প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো থেকে এটা বোঝা যায় না যে, এই ভ্যারিয়েন্টগুলো শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষতি করছে। এছাড়াও, তরুণদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থতা অপেক্ষাকৃত কম রয়েছে।
বাবা-মায়ের উচিত তাদের সন্তানদের আগের মতোই সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুপ্রাণিত করা এবং কোভিড -১৯ এর বিস্তার রোধে সহায়তা করা।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কি নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর মতে, আজ অবধি অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলো নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার উপর সম্ভাব্য যে কোনো প্রভাবের বিষয়সহ নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো ভাইরাসের আচরণকে কীভাবে প্রভাবিত করে, বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা সে বিষয়ে ক্রমাগত গবেষণা করে যাচ্ছেন।
ভবিষ্যতে, নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভ্যাকসিনের পরিবর্তন যেমন, বুস্টার শট ব্যবহার এবং অন্যান্য হালনাগাদের প্রয়োজন হতে পারে।
কিন্তু এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হল ভ্যাকসিন নেয়া এবং ভাইরাসের বিস্তার কমাতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সেগুলো যেমন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, বায়ু চলাচল স্বাভাবিক রাখা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং নিজের মধ্যে কোনও লক্ষণ থাকলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা সেবা নেয়া অব্যাহত রাখা যা ভাইরাসের পরিবর্তনের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
আমি ভ্যাকসিন নিয়েছি, আমার কি এখনই কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা দরকার?
আপনি যদি সম্পূর্ণরূপে ভ্যাকসিন পেয়ে থাকেন কিন্তু এখনও আপনার মধ্যে কোভিড -১৯-এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে আপনার পরীক্ষা করা উচিত কিনা সে সম্পর্কে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।।
'লং কোভিড' কী? শিশুরা কি আক্রান্ত হতে পারে?
কোভিড -১৯ পরবর্তী অবস্থাকে কখনও কখনও 'লং কোভিড' নামেও সংজ্ঞায়িত করা হয়। 'লং কোভিড' এমন একটি শব্দ যা কোভিড-১৯-এ সংক্রামিত থেকে প্রাথমিকভাবে সেরে উঠার পরে কিছু মানুষের মধ্যে সপ্তাহ বা মাস ধরে থাকা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা লক্ষণগুলো বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়।
কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে ভালভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে, দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা নেই এমন প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ ও শিশু এবং কোভিড-১৯-এর ব্যাপক সংক্রমণের সময় যাদের হাল্কা লক্ষণ ছিল, তারাও আক্রান্ত হয়েছে। 'লং কোভিড' এ আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট। তবে শিশুদের যে সব লক্ষণ থাকতে পারে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ক্লান্তি, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, এবং পেশী ব্যথা ও দুর্বলতা।
শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরাও মাল্টি-সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম (এমআইএস-সি) দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এটি একটি বিরল কিন্তু মারাত্মক সমস্যা যা কোভিড -১৯ এর সাথে যুক্ত বলে ধারনা করা হয়। যদি আপনার সন্তান বা পরিবারের কোন সদস্য মারাত্মক কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর নতুন বা স্থায়ী কোনও লক্ষণ অনুভব করে, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা উচিত।
কোভিড-১৯ থেকে কীভাবে নিজেকে এবং অন্যদের রক্ষা করতে পারি?
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দেশে কোভিড -১৯ এর উচ্চ বিস্তারের বিষয়টি সতর্কতা অব্যাহত রাখার গুরুত্বকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। সংক্রমণ এড়াতে আপনি এবং আপনার পরিবার কিছু জিনিস করতে পারেন:
- বায়ু চলাচল স্বাভাবিক নয় এমন জনাকীর্ণ স্থান, সীমাবদ্ধ ও আবদ্ধ স্থানগুলো এড়িয়ে চলুন এবং আপনার ও অন্যদের মাঝে কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব রেখে অন্য সবার কাছ থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুশীলনের চেষ্টা করুন
- সামাজিক সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয় এমন জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক পরুন
- ঘনঘন সাবান ও পানি দিয়ে বা অ্যালকোহলযু্ক্ত হাত-ধোয়ার সামগ্রী ব্যবহার করে আপনার হাত ধূয়ে নিন (পড়ুন: কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পেতে হাত ধোয়ার বিষয়ে আপনার যা জানা দরকার)
- অভ্যন্তরীণ সকল স্থানে বায়ু চলাচল স্বাভাবিক রাখুন
- কাশি বা হাঁচি দেবার সময় মুখ এবং নাক কনুই দিয়ে বা টিস্যু দিয়ে ঢেকে রাখুন। ব্যবহূত টিস্যুটি তাৎক্ষণিকভাবে ময়লা জমা করার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন
- ফোন, দরজার হাতল, লাইটের সুইচ এবং কাউন্টারটপের মতো ঘনঘন স্পর্শ করা হয় এরকম জিনিসগুলো নিয়মিত পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করুন
- আপনার বা আপনার সন্তানের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিন।
কোভিড -১৯ থেকে রক্ষা পেতে আমার কি মেডিকেল মাস্ক পরা উচিত?
যদি আপনার শ্বাসকষ্টের লক্ষণ (কাশি বা হাঁচি) থাকে, সেক্ষেত্রে অন্যের সুরক্ষার জন্য অথবা আপনি যদি এমন কারো সেবা করেন যিনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন সেক্ষেত্রে একটি মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
যদি মাস্ক পরা হয়, তবে মাস্কের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে এবং ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই এর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহারের পর এগুলো যথাযথভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিতে হবে। ডিসপোজেবল ফেস মাস্ক শুধুমাত্র একবারই ব্যবহার করা উচিত।
তবে শুধুমাত্র মাস্কের ব্যবহার এই ভাইরাসের সংক্রমন রোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। এর সাথে অবশ্যই ঘনঘন হাত ধোয়া, হাঁচি ও কাশি ঢেকে রাখা, এবং ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু-এর মতো লক্ষণ রয়েছে (কাশি, হাঁচি, জ্বর) এমন ব্যক্তির সংস্পর্শও এড়িয়ে চলা উচিত।
>>পড়ুন: কোভিড-১৯ এবং মাক্স – পরিবারের জন্য টিপস
কোভিড -১৯ কি শিশুদের প্রভাবিত করে?
ভাইরাসটি শিশুদের কীভাবে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে আমরা এখনও শিখছি। আমরা জানি, যে কোন বয়সের মানুষের পক্ষে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া এবং ভাইরাসটি অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। এখন পর্যন্ত বয়স্ক ব্যক্তি এবং/অথবা আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সম্ভবত কোভিড-১৯ এর সাথে সম্পর্কিত এমন একটি বিরল কিন্তু মারাত্মক মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোমের কথা শোনা যায় যা শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রভাবিত করে। এগুলোর কিছু ক্লিনিকাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন, ক্রমাগত জ্বর; ফুসকুড়ি উঠা; লাল বা গোলাপী চোখ; ফোলা এবং/অথবা লাল ঠোঁট, জিহ্বা, হাত, পা; পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা; নিম্ন রক্তচাপ; অঙ্গগুলোতে দুর্বল রক্ত প্রবাহ; এবং প্রদাহের অন্যান্য লক্ষণসমূহ। তবে লক্ষণগুলো এসব ক্লিনিকাল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে।
যেসব শিশুদের এসব লক্ষণ রয়েছে তাদের চিকিৎসা সেবা নেয়া উচিত। প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। তবে প্রাথমিক রিপোর্টগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রদাহ-রোধকারী চিকিৎসায় ভাল সাড়া পাওয়া গেছে।
যদি আমার সন্তানের কোভিড -১৯-এর উপসর্গ থাকে তাহলে আমার কী করা উচিত?
কোনো ধরনের উপসর্গ থাকলে দ্রুত আপনার সন্তানের যত্ন নিন এবং এটি যাতে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য জনসমাগম রয়েছে এমন স্থানে (কর্মক্ষেত্র, স্কুল, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট) যাওয়া এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
আমরা যদি ভ্রমণ করি তাহলে আমার পরিবারের জন্য কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
যখন কেউ কোন স্থানে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন তখন সেসব স্থানে ভ্রমণের ব্যাপারে কি ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সেগুলো জানার জন্য সবসময় স্থানীয় এবং জাতীয় নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা উচিত। আপনি যেখানে যেতে চান, সে এলাকা ভ্রমণে ভ্রমণকারীদের প্রবেশের উপর কোন বিধিনিষেধ, প্রবেশে আলাদা থাকার প্রয়োজনীয়তা, বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ভ্রমণ নির্দেশ ভালভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত। কেউ যদি বিমানে ভ্রমণ করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনি যে এয়ারলাইনে ভ্রমণ করছেন তাদের নির্দেশিকাগুলো দেখুন। আপনি বাড়িতে থাকা অবস্থায় যেসব ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণ করেন, ভ্রমণের সময়ও একই ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণ করুন।
মানসম্পন্ন ভ্রমণ সতর্কতা গ্রহণ করা ছাড়াও এবং আপনার নিজের দেশে কোয়ারেন্টাইন বা পুনরায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য আপনাকে ইন্টারন্যাশন্যাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশানের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত কোভিড-১৯-এর সর্বশেষ আপডেট জেনে নেওয়া দরকার। এতে দেশগুলির একটি তালিকা এবং বিধিনিষেধের ব্যবস্থা দেয়া আছে।
গর্ভবতী মায়েরা কি অনাগত শিশুদের মধ্যে কোভিড -১৯ ছড়িয়ে দিতে পারে?
গর্ভাবস্থায় মা থেকে তার শিশুর মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে কিনা সে সম্পর্কে আমরা এখনও পর্যন্ত জানি না। আজ পর্যন্ত, যোনির তরল রস, কর্ড রক্ত, মায়ের বুকের দুধ, অ্যামনিয়োটিক তরল বা প্লাসেন্টায় কোভিড-১৯ এর ভাইরাস পাওয়া যায়নি। গর্ভবতী মায়েদের ভাইরাসের সংস্পর্শ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা নেয়া উচিত।
>> পড়ুন: কোভিড-১৯ মহামারীর সময় গর্ভাবস্থায় চলাচল
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো কি নিরাপদ?
হ্যাঁ। এক্ষেত্রে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো অব্যাহত রাখা উচিত। মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়ায় এমন কোনো প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। মায়ের বুকের দুধ অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা অনেক সংক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করে। মায়ের দুধ খাওয়ানো নবজাতকদের মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে, ছোট শিশুদের জন্য আজীবন স্বাস্থ্য সুবিধা দেয় এবং মায়েদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সহায়তা করে।
তবে মায়েদের যেসব সতর্কতা গ্রহন করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে, শিশুকে হাত দিয়ে স্পর্শ করার আগে ও পরে সম্ভব হলে মেডিকেল মাস্ক পরা, সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, বা অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড রাব দিয়ে হাত ধোয়া এবং এবং তাদের স্পর্শ করা যেকোন জিনিসের উপরের ভাগটা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখা।
>>পড়ুন: কোভিড-১৯ মহামারীর সময় নিরাপদে বুকের দুধ খাওয়ানো
আমি গালাগালি, বৈষম্য এবং কলঙ্ক ছড়ানো নিয়ে উদ্বিগ্ন। কী ঘটছে সে সম্পর্কে কথা বলার সর্বোত্তম উপায় কী?
এটা স্বীকৃত যে, আপনি করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তিত বোধ করেন। কিন্তু ভয় এবং কলঙ্ক একটি কঠিন পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে।
জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরি অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের জন্য হতাশার। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকা এবং একে অপরের প্রতি সদয় এবং সহায়ক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে শব্দ বা ভাষার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যেসব ভাষার ব্যবহার বিদ্যমান নেতিবাচক ধারনাগুলিকে প্রতিষ্ঠিত করে বা স্থায়ী রুপ দেয়, সেগুলো মানুষকে পরীক্ষা করা এবং নিজেদের ও তাদের সম্প্রদায়কে সুরক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
>> কোভিড -১৯-এর ক্ষতির মধ্যে বাবা-মা কীভাবে তাদের সন্তানকে সহায়তা করতে পারেন
>> কোভিড -১৯ সম্পর্কে আপনার সন্তানের সাথে কীভাবে কথা বলবেন
অনলাইনে কোভিড-১৯ সম্পর্কে প্রচুর ভুল তথ্য রয়েছে। আমার কি করা উচিত?
কোভিড -১৯ সম্পর্কে অনলাইনে অনেক ভুল তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে। আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও এর মতো বিশ্বস্ত সুত্র থেকে যাচাইকৃত তথ্য এবং পরামর্শ নিন।
যদি অনলাইনে এমন কন্টেন্ট দেখেন যা আপনি মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বলে মনে করেন, তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিপোর্ট করার মাধ্যমে এটির ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে আপনি সাহায্য করতে পারেন।
কোভিড-১৯-কে "মহামারী" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটার মানে কি?
"মহামারী" শব্দটি কোভিড-১৯ এর ভৌগোলিক বিস্তারকে বোঝায়। এটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত মানুষের সংখ্যার ইঙ্গিত দেয় না।
ইউনিসেফ কোভিড -১৯ পোর্টালে ফিরে যান
বাবা-মার জন্য ইউনিসেফ প্যারেন্টিং কোভিড -১৯ গাইড-এ ফিরে যান
এই পৃষ্ঠাটি সর্বশেষ ২০আগস্ট ২০২১ এ আপডেট করা হয়েছিল। কোভিড-১৯ সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য ডব্লিউএইচও-এর ওয়েবসাইট দেখুন।