সোশ্যাল পলিসি
কোনো শিশু যাতে পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করা
- পাওয়া যাবে:
- বাংলা
- English
চ্যালেঞ্জ
জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে একটি উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে।
যদিও বাংলাদেশ আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সমৃদ্ধি অর্জন করছে, তবুও অনেক শিশু দারিদ্র্য এবং অসহায়ত্বের চক্রে আটকে আছে।
কোভিড-১৯ মহামারি অনেক পরিবারের জন্য বাড়তি অর্থনৈতিক ধাক্কা নিয়ে এসেছে। ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের এক যৌথ সমীক্ষা অনুযায়ী, মহামারির কারণে পরিবারগুলোর গড় আয় প্রায় ১৯ শতাংশ কমে গেছে। যখন পরিবারগুলো খাবার যোগাড় করতে হিমহিশ খায়, তখন শিশুশ্রম ও শিশুবিয়ের শিকার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
বাংলাদেশে এখন শিশুর সংখ্যা ৫ কোটি ৭০ লাখ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ। তাদের মধ্যে থাকা সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা দেয়া দেশের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন বিশ্বে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠী সম্পন্ন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
কিন্তু শৈশবকালীন দারিদ্র্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে রয়ে গেছে। দেশব্যাপী ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ২৪ শতাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে এবং ১৩ শতাংশ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো চলমান রয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোর তিন-চতুর্থাংশ এবং সবচেয়ে বিপন্ন জনগোষ্ঠী এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সুরক্ষিত নয়।
এই ব্যবধান বিশেষ করে শহরাঞ্চলে তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়নের অর্থ হচ্ছে – দেশটির জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ এখন শহরে বসবাস করে। তবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো এই ক্রমবর্ধমান নগরায়নের সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে, শুধুমাত্র শহরাঞ্চলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আছে মাত্র ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে নিয়মিত আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার তীব্রতা বৃদ্ধি প্রায়শই এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পরিবারগুলোকে এক বেলা না খেয়ে থাকা, শিশুদের স্কুলে যেতে না দেওয়া, শিশুবিয়ে ও চিকিৎসা সেবা না নেওয়ার মতো ক্ষতিকর কৌশল অবলম্বনে বাধ্য করে। কোভিড-১৯ মহামারি ও আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়গুলো একটি উন্নত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে, যা জীবিকা হারানোর কারণে দারিদ্র্যে নিপতিত হওয়ার ঝুঁকি কমানোর সাথে সাথে এধরণের অভিঘাত মোকাবেলার জন্য ব্যবস্থা তৈরিতে সহয়তা করবে।
শিশুরা জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও সামাজিক সুরক্ষা বাজেটের মাত্র ১৫ শতাংশ তাদের পেছনে ব্যয় করা হয়। নারীদের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রয়োজনগুলোর প্রতি যথেষ্ট দৃষ্টিপাত করা হয়না। ২০১৬-১৭ সালে গৃহীত ১২০টি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মধ্যে মাত্র ২৭টির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল নারীরা।
সমাধান
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজনের বয়স ১৮ বছরের কম অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক সুফল ভোগ করছে; যার মানে আমাদের কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫-৬৪ বছর) নির্ভরশীল জনসংখ্যার (০-১৪ বছর এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে) চেয়ে বেশি। কিন্তু, কর্মক্ষম মানুষের এই আধিক্য শীঘ্রই কমতে থাকবে। তাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক সুফল পেতে হলে এখনই শিশুদের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।
গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক নীতিমালা তৈরী ও প্রনয়নের ক্ষেত্রে শিশুদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
ইউনিসেফ বরাবরই তথ্য ও উপাত্তের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সময়মত সঠিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহের মাধ্যমে ইউনিসেফ নীতিনির্ধারকদের সঠিক এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে সার্বজনীন নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রনয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকে।
বাংলাদেশের সব শিশুর জন্য, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গোটা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে একাধিক সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় এর মাধ্যমে ইউনিসেফ কাজ করছে।